মুমিন বিশ্বাস করে তার ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের শান্তি, স্থিতি, সাফল্য ও মুক্তি নির্ভর করে আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের ওপর। তার সব ইবাদত ও আরাধনার উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি, দয়া ও অনুগ্রহ লাভ করা। আর হাদিসে এমন কিছু সময় ও আমলের কথা বলা হয়েছে, যা বান্দার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ত্বরান্বিত করে। তার কয়েকটি তুলে ধরা হলো।

১. রাতের শেষ প্রহরে দোয়া : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে আমাদের প্রতিপালক পৃথিবীর আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন—কে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব; কে আমার কাছে চাইবে, আমি তাকে দান করব; কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করব।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১৪৫)

২. মানুষের প্রয়োজন পূরণ : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে দুনিয়ার কোনো বিপদ থেকে রক্ষা করবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাকে বিপদ থেকে তাকে রক্ষা করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো গরিব লোকের সঙ্গে (পাওনা আদায়ে) নম্র ব্যবহার করবে, আল্লাহ তার সঙ্গে দুনিয়া ও আখিরাতে নম্র ব্যবহার করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন করে রাখবে, আল্লাহও তার দোষত্রুটি দুনিয়া ও আখিরাতে গোপন রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্য করে, আল্লাহও ততক্ষণ তাঁর বান্দার সাহায্য করেন।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৯৪৬)

বিপরীতে যে মানুষকে সাহায্য করে তার ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘গরিব-মিসকিন ও অভাবী মানুষকে প্রতিহত করতে যে নেতা নিজের দরজাকে বন্ধ করে রাখে, তার দারিদ্র্য, অভাব ও প্রয়োজনের সময় আল্লাহ তাআলাও আকাশের দরজা বন্ধ করে রাখবেন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৩৩২)

৩. আল্লাহর জিকির ও দোয়া পাঠ : আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে নামাজ আদায় করছিলাম। উপস্থিত মুসল্লিদের মধ্যে এক ব্যক্তি বলে উঠল—আল্লাহু আকবর কাবিরা, ওয়াল হামদুলিল্লাহি কাসিরা ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতাও ওয়া আসিলা। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, এমন এমন শব্দগুলো কে বলেছে? তখন ওই ব্যক্তি বলল, আমি হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেন, আমি এ ব্যাপারে আশ্চর্যবোধ করলাম। অতঃপর তিনি যা বললেন তার অর্থ হলো এ কারণে আকাশের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৮৮৭)

৪. কালেমা পাঠ : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো বান্দা সততার সঙ্গে ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বললে তার জন্য আকাশের দরজাগুলো খোলা হয়। ফলে উক্ত কলেমা আরশে আজিম পর্যন্ত পৌঁছে যায়, যতক্ষণ না সে কবিরা গুনাহ ত্যাগ করে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৯০)

৫. নামাজের জন্য অপেক্ষা : আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে মাগরিবের নামাজ পড়লাম। তারপর যার চলে যাওয়ার চলে গেল এবং যার থেকে যাওয়ার থেকে গেল। রাসুলুল্লাহ (সা.) এত দ্রুতবেগে এলেন যে তাঁর দীর্ঘ নিঃশ্বাস বের হতে লাগল। তিনি তাঁর দুই হাঁটুর ওপর ভর করে বসে বলেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো। তোমাদের প্রতিপালক আসমানের একটি দরজা খুলে দিয়েছেন এবং ফেরেশতাদের কাছে তোমাদের সম্পর্কে গর্ব করে বলছেন—তোমরা আমার বান্দাদের দিকে তাকিয়ে দেখো, তারা এক ফরজ আদায়ের পর পরবর্তী ফরজ আদায়ের অপেক্ষা করছে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৮০১)

৬. রোজা পালন : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না : ন্যায়পরায়ণ শাসকের দোয়া, রোজাদারের দোয়া যখন সে ইফতার করে, অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া। আল্লাহ একে (মাজলুমের দোয়া) মেঘমালার ওপর তুলে নেন, তার জন্য আকাশের দরজাগুলো উন্মুক্ত হয়ে যায় এবং আল্লাহ বলেন—আমার ইজ্জত ও সম্মানের শপথ! কিছু দেরিতে হলেও আমি তোমাকে সাহায্য করব।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৫২৬)

৭. নামাজের সময় দোয়া : সাহাল বিন সাদ আস-সায়িদি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘দুটি সময় আসমানের দুয়ারগুলো খোলা হয়। তখন সাধারণত দোয়াকারীর দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। নামাজের সময় হলে এবং জিহাদের জন্য কাতারবদ্ধ হলে।’ (সহিহ আল-জামি, হাদিস : ৩৫৮৭)

৮. সন্তানের জন্য মা-বাবার দোয়া : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া নিঃসন্দেহে কবুল হয় : মাজলুমের দোয়া, মুসাফিরের দোয়া ও সন্তানের জন্য পিতার দোয়া।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৮৬২)

৯. সূর্য ঢলার পর নামাজ পড়া : আবদুর রহমান বিন সায়িব (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) সূর্য ঢলার পর জোহরের আগে চার রাকাত নামাজ আদায় করতেন এবং তিনি বলেন, নিশ্চয়ই এ সময় আসমানের দুয়ারগুলো খোলা হয়। আমি পছন্দ করি এ সময় আমার কোনো নেক আমল ওপরে উঠুক।’ (রিয়াজুস সালিহিন, হাদিস : ১১১৭)

১০. রমজান মাসে : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন রমজান মাস আসে আসমানের দুয়ারগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দুয়ারগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শিকলবদ্ধ করা হয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮৯৯)

আল্লাহ সবাইকে যথাসময়ে যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।